চাঁদের গন্ধ কেমন?

চাঁদের কলঙ্ক আছে তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু চাঁদের গন্ধ আছে কথাটা কেমন বিদঘুটে শোনায় না?শুনতে আজগুবি মনে হলেও এটাই সত্যি! কেমন আমাদের প্রিয় চাঁদ মামার গন্ধ?  

১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে অ্যাপোলো ১৭ নামের নাসা তৃতীয়বারের মতো পরিচালনা করেছিল চন্দ্রঅভিযান। এ অভিযানে চাঁদে নেমেছিলেন মার্কিন অ্যাস্ট্রোনট জিনকারন্যান। তিনি চাঁদের ধুলোবালি পরীক্ষা করে জানান, সেগুলো তুষারের মতো নরম, তবে রুক্ষ এবং গন্ধটা ঠিক পোড়া বারুদের মতো, যেন সেখানে কেউ এইমাত্র রাইফেলের গুলি ছুড়েছে।  এই অভিযানের আরেক নভোচারী মার্কিন জীববিজ্ঞানী জ্যাকস্মিটেরও একই ভাষ্য।

অ্যাপোলো ১৭ অভিযানের আটমাস আগে এপ্রিলে চন্দ্র অভিযানে গিয়েছিল নাসার অ্যাপোলো ১৬। এ অভিযানের একমাত্র নভোচারী চার্লস ডিউক ও চাঁদে পোড়া বারুদের গন্ধ পেয়েছিলেন। কিন্তু তখন বিষয়টি আমলে না নিলেও অ্যাপোলো ১৭ অভিযানের পর তা বিশ্বাস করতে শুরু করে নাসা। 

কিন্তু চাঁদের মাটিতে এমন দাহ্য পদার্থ নেই। এর মূল উপাদান সিলিকন ডাই-অক্সাইড, যা চাঁদে আছড়ে পড়া উল্কা থেকে কোটি কোটি বছরে তৈরি হয়েছে।এছাড়া আছে উচ্চমাত্রার লোহা, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম খনিজ। এর কোনোটিই বারুদের উপাদান নয়। বারুদের একটি জিনিসই আছে চাঁদে। সেটি সালফার, তা-ও পরিমাণে নগণ্য, মাত্র শূন্য দশমিক ২শতাংশ; যেখানে বারুদে সালফার ১০শতাংশ। তাহলে এ গন্ধের উৎস কী?

নাসার জনসন স্পেস সেন্টারের লুনার স্যাম্পল ল্যাবরেটরির গবেষক গ্যারিল ফগ্রেন এর ধারণা, চাঁদের ধূলিকণা থেকে বাষ্পীভূত গ্যাসের উৎস হয়তো সৌর বাতাস। সূর্য থেকে উষ্ণ হাইড্রোজেন, হিলিয়াম আর অন্য আয়ন চাঁদে আসে। এসব আয়ন চন্দ্র পৃষ্ঠে আঘাত হানলে তা ধূলিকণার মধ্যে ঢুকে যায়

বিভিন্ন চন্দ্র অভিযানে কয়েকশ পাউন্ড চাঁদের মাটি, ধূলিকণা, পাথর পৃথিবীতে এনেছেন নভোচারীরা।  সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে লুনার স্যাম্পল ল্যাবে রাখা আছে। কিন্তু রহস্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, এসব নমুনা হাজার শুঁকেও কোনো গন্ধ পাওয়া যায়নি।তাহলে কি গন্ধের ব্যাপারটা পুরোটা ধাপ্পাবাজি? নভোচারীদের উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা? এ ব্যাপারে গ্যারিল ফগ্রেনের ধারণা, মাটি আনার সময় নভোযানের আর্দ্র বাতাসে বাষ্পীভূত হয়ে মিশে গেছে, গায়ে মাখা সুগন্ধি যেভাবে বাতাসে মিলিয়ে যায়। এ সমস্যা সমাধানে পরবর্তী সময়ে থার্মোস ভ্যাকুয়াম কনটেইনারে চাঁদের নমুনা এনেছেন নভোচারীরা।

তবে দুর্ভাগ্য, সেবার ফিরতি পথে চাঁদের চোখা ধূলিকণার আঘাতে কনটেইনারের সিল নষ্ট হয়ে যায়। তাই চাঁদের গন্ধ আর পৃথিবীতে আনা যায়নি।

আরো পড়ুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন