রক্ত দেখে ভয় লাগে, মাথা ঘোরে কেন?

হিমোফোবিয়া শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দাংশ 'haima' এবং 'phobos' থেকে, যাদের অর্থ যথাক্রমে রক্ত এবং ভয়। অর্থাৎ হিমোফোবিয়ার সহজ সরল অর্থ হলো রক্তকে ভয় পাওয়া। সেই রক্ত হতে পারে নিজের, কিংবা অন্য কোনো মানুষ অথবা পশুপাখির।

যারা এ ফোবিয়ায় আক্রান্ত তারা যে শুধু রক্তকেই ভয় পান তা নয়, রক্ত সম্পর্কিত যেকোনোকিছু দেখলেই তারা আঁতকে ওঠেন। এটি হতে পারে দুর্ঘটনার ফলে সৃষ্ট ক্ষতচিহ্ন, ঘাঁ, কাটাছেঁড়া; কিংবা বিভিন্ন বস্তু যেগুলোর সাথে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে, যেমন- সিরিঞ্জ, ইনজেকশন, এবং ছুরিকাঁচি। এই অমূলক ভীতির কারণে এসব মানুষের জীবনযাপন দূর্বিষহ হয়ে ওঠে। হাত কেটে যাবে এই ভয়ে গৃহিণীরা ঘরের কাটাকুটিতে ছুরি-বটিতে হাত লাগাতে চান না। ছোট বাচ্চাকাচ্চা, এমনকি অনেক প্রাপ্তবয়স্কের কাছে ইনজেকশন হয়ে দাঁড়ায় এক ভীতির বিষয়, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তাদের চিকিৎসায়। এই ফোবিয়া প্রভাব ফেলে পেশা নির্বাচনেও। অনেকে তো শুধু রক্ত দেখতে হবে বলে চিকিৎসক হওয়ার আশা ছেড়ে দেন।

কারণ ও রিস্ক ফ্যাক্টর :

গবেষকদের মতে, তিন থেকে চার শতাংশ মানুষের রক্ত দেখলে ভয় পেয়ে ওঠার বাতিক রয়েছে। সাধারণত ছেলেরা গড়ে ৯ বছর এবং মেয়েরা সাড়ে ৭ বছর বয়স থেকে রক্তভীতিতে ভুগতে শুরু করে। বেশ কিছু নিয়ামক রয়েছে, যেগুলো হিমোফোবিয়ার জন্য দায়ী। এগুলো হলো:

  • বংশগতির প্রভাব: অনেকে বাবা-মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে রক্তভীতি পেয়ে আসেন।
  • অনুকরণ: আমরা জানি, সকল ফোবিয়াই কারো না কারো কাছ থেকে শিখন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্জিত হয়। তাই নিজের আশেপাশের মানুষদের রক্তের প্রতি ভয় পেতে দেখলে, নিজের মধ্যেও হিমোফোবিয়া গড়ে ওঠে।
  • ট্রমাটিক ঘটনা: রক্ত নিয়ে পূর্বে কোনো ট্রমাটিক ঘটনা ঘটে গেলে তা মানুষকে হিমোফোবিয়ার দিকে ধাবিত করে।

শারীরিক উপসর্গ :

  • শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হওয়া।
  • হৃদকম্পন বেড়ে যাওয়া।
  • মাথা ঘোরানো ও বুকে ব্যথা হওয়া।
  • ঠকঠক করে কাঁপতে থাকা।
  • বমি বমি ভাবের উদ্রেক ঘটা।
  • শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বেয়ে পড়তে থাকা।
  • মানসিক উপসর্গ :
  • প্রচন্ড ভীত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়া।
  • চারপাশ থেকে বিস্মৃত হয়ে পড়া।
  • দেহের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে, এমন অনুভূত হওয়া।
  • এখনই মারা যাবো এমন অনুভূত হওয়া।

নিরাময় ও প্রতিরোধ :

সত্যি বলতে, হিমোফোবিয়া প্রতিরোধে প্রথাগত ওষুধের চাইতে দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি আর মনোবলই বেশি কাজে দেয়। মনে রাখতে হবে, রক্ত কেবল মানবদেহের অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। একে ভয় পাবার কিছুই নেই। হিমোফোবিয়া নিরাময়ে এক্সপোজার থেরাপি বেশ ফলাফল দিয়ে থাকে। এই থেরাপিতে রোগীকে বারবার রক্তের সংস্পর্শে এনে সেটির সাথে অভ্যস্ত করানো হয়। এতে করে রোগী বুঝতে পারে, রক্ত নিয়ে যে ভয় সে এতদিন পেয়ে আসছিলো, তা নিতান্তই অমূলক। এভাবে তার ভয় ও আতঙ্ক কেটে যায়। কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি এবং রিলাক্সেশন থেরাপি ব্যবহার করে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও রক্তভীতি কমিয়ে আনতে অ্যাপ্লাইড টেনশন নামের একটি কসরত কৌশল রয়েছে যেখানে ধাপে ধাপে শরীরের কিছু পেশির সংকোচন ও প্রসারণ করার মাধ্যমে উদ্বেগ কমিয়ে আনা সম্ভব।

তথ্যসূত্র : রোর বাংলা

আরো পড়ুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন